Make Tech Wired

আইফোনের প্রাইভেসি স্ক্যাম — আইফোন আর মোটেও প্রাইভেট নেই!

আইফোন এর প্রাইভেসি স্ক্যাম

“আইফোন”, দুনিয়ার সবচাইতে প্রাইভেসির প্রতি শ্রদ্ধা করা এক ডিভাইসের নাম। রাইট? আরে কেন নয়, অ্যাপেল তো মার্কেটিং ই করে “Privacy. That’s iPhone” — কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, প্রাইভেসির নামে আইফোন ঝোলাচ্ছে মূলা। বরং এটা বললে ভুল হবে না যে, আইফোন বর্তমানে সবচাইতে বড় স্প্যাইং মেশিন। চলুন আলোচনা করি, কীভাবে অ্যাপেল আপনার প্রাইভেসি নিয়ে মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করছে। আর পরবর্তী আর্টিকেলে আলোচনা করবো, কীভাবে বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড আইফোনের তুলনায় অনেক বেশি প্রাইভেট।

বহুদিন পরে ব্লগ লিখতে শুরু করলাম, লেখার ভুল ত্রুটি বা ছন্দ আগের মতো খুঁজে না পেলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করছি।


আইফোনের ভুয়া প্রাইভেসির প্রতিজ্ঞা

প্রাইভেট আর সিকিউর ডিভাইস হিসেবে অ্যাপেল তাদের আইফোন কে খুব মার্কেটিং করে থাকে। যেকোনো র‍্যান্ডম পারসন কে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কে বেশি প্রাইভেট, আইফোন নাকি অ্যান্ড্রয়েড তো বেশির ভাগ মানুষ বলবে, “অবশ্যই আইফোন”। কারন অ্যাপেল এতো বড় এক কম্পানি, কতো দামিদামি ডিভাইস তাদের, আইফোন বা অ্যাপেল প্রডাক্ট সব বড় বড় মানুষ সেলিব্রেটি রা ব্যাবহার করে। তো আইফোন প্রাইভেট জিনিস না হলে কি হুদাই লাখ টাকা দিয়ে মানুষ আইফোন কেনে?

গল্পের শুরুটা হয়েছিলো ৮-৯ বছর আগে। এই সময়ে অ্যাপেল তাদের নতুন প্রাইভেসি পলিসি লঞ্চ করে আর সেখানে তারা বড় বড় অক্ষরে লিখেছিলো, আপনার আইফোনে স্টোরড থাকা ডাটা বা আইক্লাউডে কোন স্টোরড ডাটার উপরে আমরা মনিটাইজ করি না। আর গ্রেট কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স করাতে কখনই আপনার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। — ব্যাস হয়ে গেলো মার্কেটিং, এবার সবাই বিশ্বাস করতে আরম্ভ করলো যে অ্যাপেল আইফোন হচ্ছে সর্বাধিক প্রাইভেসি ফোকাসড ডিভাইজ।

কিন্তু আগে অ্যাপেল শুধু প্রডাক্ট বেচে টাকা কামাই করতো কিন্তু বর্তমানে তারা Apple TV+, iCloud, Apple Music, Apple News+ ইত্যাদি সার্ভিস বেচে টাকা কামাই করে। আইফোনের সেলে গত কয়েক বছরে তেমন কোন উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু অ্যাপলের তো বেশি প্রফিট চাই, আর আইফোনের প্রাইস আগে থেকেই আকাশ ছোঁয়া। তাই তারা সার্ভিসের দিকে মানুষকে পুশ করতে শুরু করে। কিন্তু খেলা তো শুরু হয় এখানেই। যখনই কোন সার্ভিসে কাস্টমারদের বেস্ট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিতে চাইবেন আপনার প্রয়োজন হবে ইউজার ডাটা। আপনার কাছে যতোবেশি ঐ ইউজারের ডাটা থাকবে আপনি ততোবেশি ঐ ইউজার কে পারসনালাইজড সার্ভিস অফার করতে পারবেন।

তো এর নামে হচ্ছে, অ্যাপেল বর্তমানে আপনার সব ধরনের ইউজার ডাটা কালেক্ট করে। আপনি কোন অ্যাপ ওপেন করলেন, কোন অ্যাপে কতক্ষণ থাকলেন এই সবকিছু অ্যাপেল তাদের সার্ভারে স্টোর করে এবং ব্যবহারও করছে। এখন প্রস্ন হচ্ছে অ্যাপেল সেই ডাটা গুলো শুধু নিজে ব্যবহার করছে না অন্যদের সাথেও শেয়ার করছে? কয়েক বছর আগে ফেসবুকের ক্যামব্রিজ এনালিটিকা ডাটা স্ক্যামের কথা মনে আছে, সেখানে ফাঁস হয়েছিলো ফেসবুক কীভাবে তাদের ইউজারদের ডাটা অন্যদের কাছে বিক্রি করে খায়।

তো এই স্ক্যান্ডালের উপরে মিঃ টিম কুক স্যার বলেছিলেন, কারো খুব বিস্তারিত প্রোফাইল তৈরি করা একেবারেই উচিৎ নয় এই টাইপের প্রোফাইলে অনেক গভীর তথ্য লুপ্ত থাকে আসলে এই টাইপের ডাটা কোথাও স্টোরড থাকায় উচিৎ নয়। প্রত্যেকটা কম্পানি যারা বিজ্ঞাপনের ধান্দা চালায় অনলাইনে আপনাকে ট্র্যাক করার জন্য আপনার উপরে একটা ইউনিক প্রোফাইল তৈরি করে। ধরুন, ওরা আপনার সার্চ থেকে জেনে গেছে আপনি পিজ্জা খেতে পছন্দ করেন, তারপরে পরে আপনাকে পিজ্জার বিজ্ঞাপন দেখানো হবে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যাপেল এখন নিজেই এমন প্রোফাইল তৈরি করে যেখানে ইউজারের অনেক অনেক গভীর ইনফরমেশন নিহত রয়েছে। অ্যাপ স্টোর আর কি কি ট্র্যাক করছে এই আর্টিকেলটি (Apple Is Tracking You Even When Its Own Privacy Settings Say It’s Not, New Research Says) একবার ঢু মেরে আসুন। এমনকি কোন অ্যাপ কে ডাটা কালেক্ট করার পারমিশন না দিলেও সেই অ্যাপ ৯৫% ডাটা ট্র্যাক করতে সক্ষম। মানে অ্যাপেল নিজেই এমন প্রোফাইলের জন্য দায়ী যেটা নিজ টিমকুকের অনুসারে এক্সিস্ট করায় উচিত নয়। আরে বাহ! শুধু তাই নয়, প্রাইভেসি সেটিং অফ রাখার পরেও অ্যাপেল আপনার তথ্য গুলো তাদের সার্ভারে সেভ করে।

মানে আপনার প্রত্যেকটা ক্লিকে কোন কোন ইনফো সার্ভারে স্টোর হচ্ছে এবং এই তথ্য থেকে যেকোনো ইউজারের ইউনিক প্রোফাইল তৈরি করা সম্ভব। যেটা অ্যাপেল অন্যদের জ্ঞান দেয় এমনটা করা যাবে না, কিন্তু অ্যাপেল নিজেই এগুলো করছে। আরে দাঁড়ান, এখনো তো অ্যাপেল আইফোন এর সবচেয়ে বড় বাটপারি “অ্যাপ ট্র্যাকিং পলিসি” নিয়ে আলোচনা শুরুই করলাম না…

আরেক বাটপারির নাম, “অ্যাপ ট্র্যাকিং পলিসি”

অ্যাপ ট্র্যাকিং পলিসি — মুলত একটি আইওএস ফিচার, যেখানে কোন তৃতীয়পক্ষ অ্যাপ যদি ইউজার ডাটা ট্র্যাক করতে চায় তাহলে ইউজারের থেকে পারমিশন নিতে হবে। যদি ইউজার অনুমতি না দেয় তাহলে ঐ অ্যাপ কোন ইউজার ডাটা কালেক্ট করতে পারবে না। অ্যাপটি এখনো অ্যাডস দেখাবে, কিন্তু আপনার ডিটেইলড প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন না। তারপরেও যদি অ্যাপটি ডাটা কালেক্ট করার চেস্টা করে তো অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটিকে লাত্থি মেরে ফেলে দেওয়া হবে। ওয়াও, সেই প্রাইভেট ফিলিংস রাইট? মনে হচ্ছে অ্যাপেল কতোটা কেয়ারফুল!

কিন্তু এ কি? এই আর্টিকেলে (Former Apple engineer says the button on iPhones asking apps not to track you is a ‘dud’ that gives users a ‘false sense of privacy’) অ্যাপেলের এক ইঞ্জিনিয়ার বলছে এই ফিচার জাস্ট False Sense of Privacy? — কারন এক লিক হওয়া ইমেইল থেকে এই তথ্য বেরিয়ে আসে যে আপনি অ্যাপ ট্র্যাকিং করতে কোন অ্যাপকে পারমিশন না দেওয়ার পরেও আপনার ডিভাইস ইনফো এবং আইপি অ্যাড্রেস থেকে অ্যাপ ডেভেলপার ৯৫% আইওএস ইউজারদের ডাটা এখনো ট্র্যাক করতে পারছে।

এখন বলবেন, তাহলে ফেসবুক কেন অ্যাপলের সাথে উঠে পড়ে লেগেছিলো যে ইউজার ট্র্যাক না করতে পারলে তারা তো অ্যাডস দেখাতে পারবে না। শুনুন, ৬-৭ মাস পরে ফেসবুক স্ন্যাপচ্যাট সবাই অনুমতি পেয়ে গেছিলো ইউজার ট্র্যাকিং করার জন্য। তবে হ্যা, এখানে এই পলিসি ছিলো যে তারা কারো ইউনিক প্রোফাইল তৈরি করতে পারবে না যে অমুক ব্যাক্তি পিজ্জা পছন্দ করে। কিন্তু কি লাভ? তারা যেটা ট্র্যাক করতে পারছিলো সেই ডাটা থেকে ইউজার গ্রুপ তৈরি করে ফেলেছে। মানে তারা সরাসরি জানে না আপনি ই পিজ্জা পছন্দ করেন, কিন্তু তারা জানে এখানে এক গ্রুপের মানুষ আছে যারা পিজ্জা পছন্দ করে। এখন গ্রুপ টার্গেট করে অ্যাডস দিলে ঘুরেফিরে আপনার কাছে সেই পিজ্জার অ্যাডস ই আসবে। তো অ্যাপ ট্র্যাকিং পলিসির আসল মতলব কি রইলো? এটা স্রেফ একটা মার্কেটিং টেকনিক ছাড়া আর কি তাহলে?

চায়নার গোলাম টিমকুক

এখন চায়না বিশ্বের কতিপয় এমন দেশ গুলোর মধ্যে পড়ে যারা ইউজার প্রাইভেসি একেবারেই পছন্দ করে না। তারা প্রত্যেকটা নাগরিক কে কন্ট্রোল করতে পছন্দ করে। এই জন্য ঐ দেশে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব কিছুই নেই। কিন্তু অ্যাপেল এর জন্য চায়না অনেক বড় মার্কেট। তাহলে চাইনিজ সরকার অ্যাপেল কে কীভাবে এলাউ করলো? গল্পটা অনেক ইন্টারেস্টিং কিন্তু বেশি গভিরে গেলে আর্টিকেল বহু লম্বা হবে।

চাইনিজ সরকার অ্যাপেল কে বলেছিলো আমাদের দেশের ইউজার দের ডাটা আক্সেস আমাদের দিতে হবে তবেই এই দেশে অ্যাপেল বিজনেস করতে পারবে। তো অ্যাপেল কে বাধ্য হয়ে চায়নার কাছে সব ইউজার ডাটার আক্সেস তুলে দিতে হয়েছিলো। কি ভেবেছিলেন? টাকা Vs ইউজার প্রাইভেসি? অ্যাপেল কোনটা বেঁছে নেবে? এই উত্তর জানেন না এতো ভোলা নিশ্চয় আপনি নোন।

দেখুন আইক্লাউডে আপনার স্টোরড থাকা ডাটা এনক্রিপটেড হয়ে থাকে। কিন্তু তালার চাবি থাকে অ্যাপল এর কাছে। মানে অ্যাপেল আপনার আই ক্লাউড ডাটা দেখতে পারবে। তবে চায়নার ক্ষেত্রে এই চাবি অ্যাপেল চাইনিজ সরকারের কাছে হস্তান্তর করে অনেক পূর্বেই আর এই কারনেই অ্যাপেল সেখানে বিজনেস করতে পারছে। মজা তো হয়েছে এখন, অ্যাপেল আই ক্লাউডে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। মানে এখন ডাটার চাবি অ্যাপেল বা সরকার কারো কাছেই নেই বরং রয়েছে ইউজারের কাছে। এখন অ্যাপেল বলবে আরে আমি চাবি দেবো ক্যামনে? আমার কাছে তো চাবিই নাই… তো চাইনিজ সরকার বলবে, ভাগো তোমার বিজনেস ও নাই! এখন মজার ব্যাপার এইটাই দেখার যে অ্যাপেল এই সিচুয়েশন কীভাবে হ্যান্ডেল করে।

হ্যা, চায়নায় অ্যাপেল কি করছে এই ব্যাপারে হয়তো আপনার আমার ডাটা প্রাইভেসির যায় আসছে না। কিন্তু এখানে এটা ইতি টানা যাচ্ছে যদি পরিস্থিতি এমন আসে নিয়ম Vs ইউজারদের অটুট প্রাইভেসি। তাহলে অ্যাপেল রুলস অনুসরন করবে এবং আপনার প্রাইভেসি বিক্রি করতে ২ সেকেন্ড সময় লাগবে না।


তো প্রাইভেসির নামে অ্যাপেল যে জ্ঞান অন্যদের ঝাড়ে নিজেরাই যদি সেটা রক্ষা করার ক্ষমতা না রাখে তো এটা শুধু এক গন্ধ যুক্ত মজা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে প্রাইভেসির মামলায় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপেলের চেয়ে বেশি প্রাইভেট, নেক্সট কোন আর্টিকেলে আমরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

Share this article
Shareable URL
Prev Post

প্যাকেট লস কি? কিভাবে প্যাকেট লস ফিক্স করবেন?

Next Post

আন অফিসিয়াল ফোনের কিছু সমস্যা, যেগুলো নিয়ে কেউ আলোচনা করে না 😔

Comments 1
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

দামী স্মার্টফোন কেনার পূর্বে এই ধোঁকা সমূহ থেকে সতর্ক হোন

আর্টিকেলটির সূচিপত্র Hide স্মার্টফোন একটি অবচয় ব্যয়মিডরেঞ্জ ফোন গুলো এখন অনেক বেটারতাহলে দামি স্মার্টফোন কেনা…
দামী স্মার্টফোন কেনার পূর্বে এই ধোঁকা সমূহ থেকে সতর্ক হোন

ডাটা প্যাকেট কি?

যদি কথা বলি ইন্টারনেট নিয়ে, তো অবশ্যই টার্ম আসে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে ডাটা…
ডাটা প্যাকেট কি?

সাপ্তাহিক আর্টিকেল গুলো সরাসরি ইনবক্সে!