Make Tech Wired

আন অফিসিয়াল ফোনের কিছু সমস্যা, যেগুলো নিয়ে কেউ আলোচনা করে না 😔

আন অফিসিয়াল ফোন

প্রথমেই বলে রাখছি, “আন অফিসিয়াল ফোন কিনলে আপনি ধরা খাবেন”, কিংবা ফেক ফোন বা রিফারবিশড কিংবা ডেমো ইউনিট আপনাকে ধরিয়ে দেবে — এই আর্টিকেল টি মোটেও এই সম্পর্কিত নয়। বরং এই আর্টিকেলে আমি আন অফিসিয়াল ফোনের এমন কিছু মেজর সমস্যা গুলোর আলোচনা করবো যে সমস্যা গুলো আমি নিজে ফেস করেছি এবং আমার আশেপাশের ব্যাক্তিদের ফেস করতে দেখেছি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এই সমস্যা গুলো নিয়ে কোন বাংলাদেশি টেক ইউটিউবারদের কথা বলতে দেখি না।


আন অফিসিয়াল ফোন

আসলে কয়েক বছর আগেও এই আন-অফিসিয়াল ফোনের কনসেপ্ট আমাদের দেশে এক্সিস্ট করতো না। কিন্তু বর্তমানে যেকোনো বাজেটের ফোন কেনার ক্ষেত্রে আন অফিসিয়াল ফোন কেনার কথায় সবার আগে মাথায় আসে। যারা এখনো জানেন না, আসলে আন-অফিসিয়াল ফোন বলতে এমন কোন ফোন নয় যেটা ঐ ফোন কোম্পানির আন-অফিসিয়াল ডিভাইস। বরং যে ডিভাইস গুলো তো অরিজিনাল কিন্তু বাংলাদেশে অফিসিয়াল ভাবে প্রপার পেপার ওয়ার্কের মাধ্যমে না এসে সরকারী ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে আনা হয়, মুলত সেই ডিভাইস গুলোকে আন-অফিসিয়াল ডিভাইস বলে আমরা চিনি।

দেশে এই ডিভাইজ গুলো জনপ্রিয়তা পাওয়ার শীর্ষ কারন হচ্ছে, বাংলাদেশের হাই ট্যাক্স। একটি লিগ্যাল ভাবে দেশে আসা ডিভাইসের দাম ৩০ হাজার টাকা কিন্তু আন-অফিসিয়াল ভাবে আসা সেম ডিভাইসেই দাম ২২ হাজার টাকা। এটা স্রেফ একটা উদাহরণ মাত্র। তো আপনিই বলুন, মানুষ একই জিনিস বেশি টাকা দিয়ে কেনো কিনবে?

আচ্ছা যাইহোক, এগুলো নতুন কোন কথা নয়, যদি পেছনের ৭-৮ বছর আপনি সুন্দরবনের জঙ্গলে না হারিয়ে থাকেন তাহলে উপরে যা যা বললাম, সবই আপনার মুখস্ত থাকার কথা। তাহলে আলোচ্য বিষয় কি?

দেখুন, সকল আন অফিসিয়াল ডিভাইস গুলো বাইরের দেশ থেকে আমাদের দেশে আনা হয়। মানে এই ডিভাইস গুলো স্পেসিফিক ভাবে আলাদা কোন দেশের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। এই জন্য এই ফোন গুলোর নানান ভ্যারিয়ান্ট দেখতে পাওয়া যায়। যেমন – ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট, চায়না ভ্যারিয়ান্ট, ইউরোপিয়ান ভার্সন, বা গ্লোবাল ভার্সন ইত্যাদি। এখন এর মধ্যে সেম মডেলের ডিভাইজ শুধু ভ্যারিয়ান্ট এর জন্য দাম কম বা বেশি হয়ে থাকে। যেমন বেশিরভাগ সময় ইন্ডিয়ান ভার্সনের ফোনের দাম গ্লোবাল ভার্সন থেকে কম হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ জনতা দাম কমের জন্য ইন্ডিয়ান ভার্সন কেনা প্রেফার করেন।

আবার অনেক সময় কিছু ডিভাইস এক্সক্লুসিভ ভাবে চায়নার জন্য রিলিজ করা হয়, সেগুলোর চায়নিজ ভার্সন ছাড়া আর কোন ভার্সন পাওয়া যায় না।

তো সমস্যা টা কোথায়?

দেখুন, সমস্যা তো রয়েছে, বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে। বিশেষ করে আপনি এমন ডিভাইস কিনছেন যেটা আপনার দেশের জন্য বা রিজিওনের জন্য তৈরি করা হয় নি, এমন ডিভাইসে আপনি নানান সমস্যা পেতে পারেন। কিন্তু সবচাইতে মারাত্মক সমস্যা ফেস করবেন সেটা হচ্ছে নেটওয়ার্ক ক্যানেক্টিভিটি তে। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট ডিভাইস গুলোতে নেটওয়ার্ক সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

এমন মানে যে আপনার ডিভাইসে সমস্যা রয়েছে ব্যাপার টা এমন নয়, বরং ডিভাইস টি আপনার দেশ এবং আপনার দেশের মোবাইল অপারেটর কে টার্গেট করে বানানো হয় নি। ইন্ডিয়ান 4G ভার্সন ফোন গুলোতে দেখা যায় বাংলাদেশে 4G+ নেটওয়ার্ক বা ক্যারিয়ার এগ্রেগেশন সাপোর্ট করে না। এর প্রধান কারন হচ্ছে ইন্ডিয়ান মোবাইল অপারেটর গুলো এবং বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর গুলো আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এর উপরে কাজ করে।

আন অফিসিয়াল ফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যা

বাংলাদেশে কমন ব্যান্ড গুলো হচ্ছেঃ ব্যান্ড ১ (২১০০ মেগাহার্জ), ব্যান্ড ৩ (১৮০০ মেগাহার্জ), এবং ব্যান্ড৮ (৯০০ মেগাহার্জ)। এই তিনটি মেজর নেটওয়ার্ক ব্যান্ড বাংলাদেশের সব অপারেটরের কাছে রয়েছে। তাছারা কিছু এক্সক্লুসিভ ব্যান্ড রয়েছে, ২৩০০ এবং ২৬০০ মেগাহার্জ। এখানে ২৩০০ মেগাহার্জ শুধু বাংলালিংক এবং টেলিটকের কাছে রয়েছে আবার ২৬০০ মেগাহার্জ শুধু রবি এবং জিপির কাছে রয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়ার নেটওয়ার্ক ব্যান্ড গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আলাদা। ভারতে বেশির ভাগ অপারেটর ৮৫০ মেগাহার্জ, ১৮০০ মেগাহার্জ এবং ২৩০০ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি তে ৪জি ডেপ্লয় করেছে। যেখানে বাংলাদেশে ৯০০,১৮০০, এবং ২১০০ (মেগাহার্জ) ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির প্রচলন বেশি।

এখন এর মানে এটা নয়, আপনার ফোন বাংলাদেশের ব্যান্ড গুলো পাবে না। পাবে, কিন্তু অ্যাডভান্স নেটওয়ার্ক সুবিধা গুলো থেকে বঞ্চিত হবেন এর মধ্যে একটা হচ্ছে 4G+ সাপোর্ট। ইন্ডিয়ার 4G+ কনফিগারেশন এবং বাংলাদেশের 4G+ কনফিগারেশন সেম নয়। ফলে স্পেসিফিকেশনে হয়তো দেখবেন আপনার ফোন টি LTE-A বা 4G+ সাপোর্ট করে। কিন্তু ব্যাস্তবিক ভাবে আপনার ফোনে আমি সেটা উপভোগ করতে পারবেন না।

ইন্ডিয়াতে কমন 4G+ কনফিগারেশন হচ্ছে ২৩০০+২৩০০ ব্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশের কমন 4G+ কনফিগারেশন হচ্ছে ২১০০+১৮০০ বা ১৮০০+৯০০ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড। এখন বাংলাদেশে শুধু বাংলালিংক ২৩০০+২৩০০ ব্যান্ড দিয়ে ৪জি+ প্রদান করে। কিন্তু সেটাও ১% এরও কম জায়গায় পাবেন।

এতো গেলো 4G+ নিয়ে সমস্যা বা ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে সমস্যা। ধরুন আপনি এমন এক দেশের আন অফিসিয়াল ফোন কিনলেন যেই ফোনে ২৬০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড সাপোর্ট নেই। তাহলে আপনার ফোন অবশ্যই নেটওয়ার্ক পাবে কিন্তু 2600Mhz ব্যান্ড এর ফাস্ট স্পীড থেকে বঞ্চিত হবেন এবং কভারেজ কম পাবেন।

আসল কথা হচ্ছে, আপনার ফোনটি যদি ৪জি ভার্সন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে বেস্ট এক্সপেরিয়েন্স পাওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট উপেক্ষা করা বেটার চয়েজ হবে। ৫জি ভার্সনের ফোন গুলোতে আবার প্রপার 4G+ সাপোর্ট দেখতে পাওয়া যায়, ইভেন ইন্ডিয়ান ভার্সনের ফোনেও। 4G+ সাপোর্ট এ অনেক পার্থক্য আসে ভাই। বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় বা হাই ট্রাফিক সময়ে আপনার ফোনে যদি 4G+ থাকে এবং আপনার মোবাইল অপারেটর যদি সেটা সাপোর্ট করে তাহলে আমি সাধারন 4G/LTE থেকে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা পাবেন যেটা ম্যাটার করে।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত এই টপিক নিয়ে কেউই আলোচনা করে না।

চাইনিজ ভ্যারিয়ান্ট ফোন কেনার আগে এই ব্যাপার গুলো মাথায় রাখুন

আন অফিসিয়াল ফোন কেনার সময় আরেকটি বড় সমস্যা হয়ে থাকে চাইনিজ ভ্যারিয়ান্ট ফোনের সাথে। এমন কিছু ডিভাইস থাকে যেগুলো শুধু চায়নার জন্য লঞ্চ হয়। আবার অনেক ডিভাইস অন্য নামে গ্লোবাল ভাবেও লঞ্চ হয়। কিন্তু কিছু ডিভাইস একেবারেই এক্সক্লুসিভ টু চায়না হয়ে থাকে।

এখন চাইনিজ ভার্সনের রমে সাধারনত গুগল সার্ভিস সাপোর্ট থাকে না। তবে ৯৯% জোগাড় লাগিয়ে ফোনে গুগল সার্ভিস ইন্সটল করানো যায়। এখন সমস্যার শুরুই এখানে। এই চাইনিজ রম গুলোতে জোড় করে ত গুগল সাপোর্ট যুক্ত করলেন কিন্তু কিছু আজব সমস্যা থেকে যায় ফোনের সাথে। যেমন ঠিক মতো গুগল ম্যাপ করে না। গুগল এর প্লে সার্ভিসের অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে ঠিক মতো জমা থাকে না। কন্টাক্ট সিঙ্ক হয় না। ইত্যাদি বহু প্যারায় আপনার জীবন ছারখার হয়ে জেতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপার গুলো নিয়ে কেউই কথা বলে না।

এখন যদি আপনার ভাগ্য ভালো হয় আর আপনার মডেলের ফোনের গ্লোবাল ভার্সন রম থেকে থাকে, তাহলে সাধারন ভাবে গ্লোবাল রম ফ্ল্যাশ করলেই ইস্যু শেষ। কিন্তু যদি গ্লোবাল রম না থাকে এবং প্রসেসর মিডিয়াটেক হয় তাহলে আপনি কাস্টম রম সাপোর্ট ও অল্মোস্ট জিরো পাবেন। নামে আপনাকে চাইনিজ ক্র্যাপ মার্কা রম নিয়ে পচে মরতে হবে।


তো উপসংহার কি দাঁড়ালো? প্রথমত, বেস্ট ৪জি এক্সপেরিয়েন্স পেতে চাইলে ইন্ডিয়ান ভার্সন ৪জি ফোন কেনা থেকে বিরত থাকুন। ২-৩ হাজার টাকা বেশি খরচ করে গ্লোবাল ভার্সনের একটা ডিভাইস কিনুন। দ্বিতীয়ত, চাইনিজ ভার্সন ফোন কেনার আগে দেখুন ফোন টির গ্লোবাল রম ভার্সন রয়েছে কিনা এবং কাস্টম রম সাপোর্ট রয়েছে কিনা। যদি রমের চক্করে না পরতে চান, চাইনিজ ভ্যারিয়ান্ট চোখ বন্ধ করে এভোয়েড করুন।

যেকোনো দেশের আন অফিসিয়াল ফোন কেনার আগে নেটওয়ার্ক সাপোর্ট যাচায় করে কিনুন। বিশ্বাস করুন এতে অনেক ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন। তাছাড়া যদি রিজেনেবল প্রাইসে হয়, তো অফিসিয়াল ডিভাইস কেনার চেষ্টা করুন (যেটা পাওয়া একেবারেই দুর্লভ যদিও)।

Share this article
Shareable URL
Prev Post

আইফোনের প্রাইভেসি স্ক্যাম — আইফোন আর মোটেও প্রাইভেট নেই!

Next Post

কীভাবে হ্যাকারদের মতো ডার্ক ওয়েব অ্যাক্সেস করবেন? [২০২৩]

Comments 2
  1. সেম কাহিনী ভাই। আমার রেডমী নোট ১১ প্রো ইন্ডিয়ান গ্লোবাল ভ্যারিয়েন্ট। আমি 4G+ পাই না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

সাপ্তাহিক আর্টিকেল গুলো সরাসরি ইনবক্সে!